Happening Now
Voter List Controversy: CM Takes Stern Steps Towards Fake Voters
চম্পাহাটিতে ভুয়ো ভোটার বিতর্ক: রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে
দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতে সম্প্রতি ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটারের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের সময় যেখানে ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮,৫০০, সেখানে চলতি বছরের তালিকায় তা বেড়ে ২২,৪০০ হয়েছে।


ভোটার তালিকায় অস্বাভাবিক পরিবর্তন
- কর্মী সণ্মেলনের মঞ্চ থেকেই ভূয়ো ভোটার কার্ড সংশোধনের ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহারাষ্ট্র ও দিল্লির ভোটার তালিকা পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে পশ্চিমবঙ্গেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি।
- যা নিয়ে রীতিমতো ঝড়ের গতিতে হচ্ছে কার্ড সংশোধন। সেই কাজ করতে গিয়েই দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটিতে ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটারের অন্তর্ভুক্তি বেড়েছে কয়েকগূণ।
- চম্পাহাটীর ২৬ এবং ৪১ নম্বর বুথের ভোটার তালিকায় প্রায় ৪০০ নতুন ভোটারের নাম যোগ হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, এরা কেউই নাকি এলাকার বাসিন্দা নন। এমনকি পঞ্চায়েত সদস্যরাও সরব হয়েছেন এই বিষয়ে।
- লোকসভা নির্বাচনের সময় চম্পাহাটি পঞ্চায়েতে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৮,৫০০। অথচ বর্তমান তালিকায় তা বেড়ে ২২,৪০০ হয়েছে। যাচাই
- করে দেখা গিয়েছে, ৬০ বছর বয়সেও নতুন ভোটার হিসেবে নাম যুক্ত হয়েছে অনেকের।
- এছাড়াও, একটি মাত্র ফোন নম্বরের সঙ্গে চার-পাঁচজন ভোটারের নাম যুক্ত থাকার ঘটনা সামনে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, বারুইপুরের ভোটার তালিকায় মালদা, মুর্শিদাবাদ, শিলিগুড়ির বাসিন্দাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
- যা প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া কি করে সম্ভব তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এমনকি যাদের নাম ভোটার লিস্টে যুক্ত তাদের কাউকেই নাকি ঐ তল্লাটে দেখাও যায়নি কখনো।
- চম্পাহাটি ৪১ নম্বর বুথের সদস্য সুব্রতবাবূ জানিয়েছেন, "তালিকায় ২৫০-৩০০ নতুন ভোটারের নাম আছে। এখনও সম্পূর্ণ দেখতে পারিনি। ফোন নম্বর ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করলে দেখা গেছে, নট রিচেবল বলছে।
- এই একই অভিযোগ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মিতালি গায়েনেরও, তার ওয়ার্ডেই ১০৬ জন নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে, কিন্তু এরা এলাকাবাসী নন। অনলাইনে ফর্ম পূরণ করে ভোটার তালিকায় নাম তোলা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিএলও-র সাথেও কথা বলেও লাভ হয়নি কোন।
- চম্পাহাটি পঞ্চায়েতের কর্মীদের কথায়, নতুন যাদের নাম যুক্ত হয়েছে তাদের বেশীরভাগেরই বয়স ৬০ বছর ৬৭ বছর এরকম। এমনকি, এক নম্বর থেকে একাধিক ভোটারের নাম যুক্ত করা হয়েছে। ফোন করলে দেখা যাচ্ছে, নম্বরগুলি মালদা, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান বা শিলিগুড়ির সাইবার ক্যাফেতেও সংযুক্ত।
শাসকদল ও বিরোধীদল বিবাদে
- ভূয়ো ভোটার নিয়ে শাসক দলের সাথে যুদ্ধ চরমে বিরোধী দলের। ভুয়ো ভোটার নাকি বেড়েছে বিজেপির জন্য। অন্যদিকে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ভারতীও জনতা পার্টি।
- বিরোধীদের অভিযোগের জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বাইরের লোক এনে ভোটার তালিকায় নাম ঢোকানো হচ্ছে। বিজেপি মহারাষ্ট্রে ৪০ লাখ ভোটার বাড়িয়েছে, দিল্লিতেও করেছে। একই পরিকল্পনা পশ্চিমবঙ্গে বাস্তবায়ন করতে চাইছে। আমরা অঙ্ক কষে বুঝে গেছি, প্রতিটি বিধানসভায় ২০-৩০ হাজার বাইরের লোককে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে এই পরিকল্পনা আমরা রুখে দেব।"
- অন্যদিকে পিসির গলার সাথে একই শুর মিশিয়ে মন্তব্য করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সাথে আঙুল তুলেছেন কমিশনের দিকে।
- এর সাথে অবশ্য জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC) বিতর্ক তুলে এনেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছেন, "গুজরাত, উত্তরাখণ্ডে NRC চালু হয়েছে, তাহলে বাংলায় কেন হবে না? রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি জঙ্গিরা কীভাবে ভোট দেয়, সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত।"
- বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের (CEO) দপ্তরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন, তিনি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে (CEC) নিশানা করছেন বলে অভিযোগ। শুভেন্দু অধিকারী নবনিযুক্ত মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকেও একটি চিঠি পাঠান, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন যে মুখ্যমন্ত্রী একজন সাংবিধানিক পদাধিকারীর প্রতি আক্রমণ করে সব সীমা অতিক্রম করেছেন।
- ফলে একটা বিষয় তো স্পষ্ট নিজেদের ভোটের ঝুলি ভরাতে, ঘাসফুল পদ্মফুল উভয়েই ধর্মের বিভাজনের রাজনীতি করছে। দেখা যাক ভোটার কার্ড সংশোধন করে আগামী নির্বাচন কে হারে আর কে যেতে?
ভুয়ো ভোটার অভিযোগে উত্তাল, ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখতে রাস্তায় তৃণমূল মন্ত্রীরা
- ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)-এর নেতারা মার্চ মাস থেকে একটি "রাজ্যব্যাপী ঘরে ঘরে সমীক্ষা" শুরু করেছেন, যার উদ্দেশ্য হল "ভুয়ো ভোটারদের" শনাক্ত করা।
- মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন যে বিজেপি, নির্বাচন কমিশনের (ECI) সহায়তায়, বিভিন্ন জেলায় ভোটার তালিকা নিয়ে কারচুপি করছে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে।
- মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে একটি সংস্থা অনলাইনে এই কারচুপি করেছে। সংস্থাটির নাম ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্রিলিয়ান্ট মাইন্ডস’ এবং আরেকটি সংস্থা রয়েছে যার নাম ‘ইন্ডিয়া ৩৬০’। এই সংস্থাগুলির কর্মীরা ECI-র জন্য কাজ করা ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোটার কার্ডের বিবরণের বিপরীতে অন্য রাজ্যের লোকজনকে নাম নথিভুক্ত করেছে।
- ভোটার তালিকা পরিশোধন অভিযানের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি নতুন কমিটি গঠনের ঘোষণাও করেছেন। এই কমিটিতে রয়েছেন বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতারা—সুব্রত বক্সী, ডেরেক ও’ব্রায়েন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিম। এই কমিটি ভোটার তালিকা যাচাই প্রক্রিয়া তদারকি করবে।
- কলকাতার মেয়র ও রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে কলকাতার চেতলা এলাকার নিজস্ব ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার তালিকা যাচাই করতে দেখা যায়। তিনি দাবি করেন, “আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমাদের দলের নেতারা আসল ভোটার, ভুয়ো ভোটার, মৃত ভোটার এবং যারা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন কিন্তু যাদের নাম এখনও তালিকা থেকে বাদ পড়েনি—এই চার ধরনের ভোটারের একটি তালিকা প্রস্তুত করবেন।”
- উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহও কুচবিহার জেলার দিনহাটা তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রের রাস্তায় নেমে পড়েন ভোটার তালিকা যাচাই অভিযানে।
- হুগলির আরামবাগে, আরামবাগ পৌরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান স্বপন কুমার নন্দীকেও তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে ভোটার তালিকা হাতে নিয়ে একটি এলাকায় ঘুরে দেখতে দেখা যায়।
- তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (CEO) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ খারিজ করে দেন। তিনি জানান, সমস্ত প্রোটোকল মেনেই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫০ (Representation of the People Act), ভোটার নিবন্ধন বিধি, ১৯৬০ (Registration of Electors Rules), এবং ইলেক্টোরাল রোল সংক্রান্ত ম্যানুয়ালের বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট BLO, AERO, ERO, DEO এবং প্রতিটি রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের CEO-রা যৌথভাবে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ করে থাকেন।”




ব্রডকাস্ট চ্যানেল







ডেইলি ডিজিটাল নিউজ পেপার











Copyright © All Rights Reserved by Truee News Bangla is a copyright property of Independent Media Corp