০৬ জানুয়ারি ২০২৫

West Bengal Politics: CPI(M) Has to Fight Double-Edged Sword

২০২৬-এর হাওয়া কোন দিকে? দ্বিমুখি রাজনীতির ফায়দা তুলে লাভ শুধু তৃণমুলের

পশ্চিমবঙ্গে চলছে দ্বিমুখী মেরুকরণের রাজনীতিতে এবং তার সর্বাধিক সুবিধাভোগী হয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেস। দলটি গত এক দশক ধরে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছে কিন্তু ২০২৬ তাদের মূলত বিজেপিকে মোকাবেলা করতে হবে। দ্বৈত রাজনীতির ফলে, ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের একটি বড় অংশ তৃণমূল কংগ্রেসকে বিজেপির বিরুদ্ধে একটি কার্যকর প্রতিরোধ হিসেবে দেখেI

পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতি: বাংলার মাটিতে একঘরে সিপিআইএম, বিজেপি

  • সিপিআই(এম)-এর একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক মেরুকরণের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসকে চিহ্নিত করেছে ।
  • ২০১১ সালের পর থেকে সিপিআই(এম) ক্রমাগত তৃনমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছে।
  • সিপিআই(এম) রিপোর্ট বলছে ধর্মিয় মেরুকরণের ফলেও আঁখেরে লাভ হচ্ছে না বাংলার সিপিআইএমের।
  • এই মেরুকরণের ফলে ধর্মনিরপেক্ষ মানসিকতার অনেক মানুষ তৃণমূলকে বিজেপির বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছেন। ফলে যে সিপিআইএম দল নাস্তিক হিসাবে প্রসিদ্ধি ছিল সেই দলও এখন নাস্তিকদের ভোটারদের ভোট হারাচ্ছে তৃণমূলের কাছে।
  • তবে, সিপিআই(এম)-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নেতৃত্বের একটি অংশ মনে করে যে এই বিশ্লেষণটি অতিসরলীকৃত। তাদের মতে, যেমন কিছু ধর্মনিরপেক্ষ মানুষ তৃণমূলকে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রভাবশালী প্রতিপক্ষ মনে করছেন, তেমনি অনেক তৃণমূল-বিরোধী ভোটার এখন বিজেপিকে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে দক্ষ প্রতিপক্ষ হিসেবে গ্রহণ করছেন।
  • এই পরিস্থিতিতে, সিপিআই(এম) রিপোর্টে বলা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপটে তৃণমূল ও বিজেপি উভয়ের বিরুদ্ধেই সমানভাবে প্রচার কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। নাহলে লাভের গুঁড় নিয়ে পগার পার হচ্ছে তৃনমূল।
  • তবে, সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে বিজেপির ভোট কমার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, যা তৃণমূল-বিরোধী পরিসরে বাম ও কংগ্রেসসহ গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট হয়ে লড়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। এই সমঝোতা আগামী নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে।

কখন এলো এই মেরুকরণ?

  • পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক মেরুকরণের এই প্রবণতা প্রথম প্রকাশ পায় ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেI ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে, অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস (AITC) পশ্চিমবঙ্গে ৪২টির মধ্যে ২২টি আসন জয়লাভ করে। ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) উল্লেখযোগ্যভাবে তাদের উপস্থিতি বৃদ্ধি করে, ১৮টি আসন জিতে, যা তাদের পূর্বের তুলনায় বড় সাফল্য ছিল। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (INC) মাত্র ২টি আসন পায়, এবং বামফ্রন্ট, যেখানে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী) [CPI(M)] অন্তর্ভুক্ত, কোনো আসন পায়নি।
  • ঠিক সেই সময় থেকেই ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষ যারা তৃনমূলকে পছন্দ করত না তাদের ভোটও ঝুলি ভরতে শুরু করেছে বাংলা সরকারের।
  • একই কারনে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই মেরুকরণের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলেও, তৃণমূল কংগ্রেসই তার সুবিধা পায়। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন AITC বিপুল জয় লাভ করে এবং ২৯৪টির মধ্যে ২১৫টি আসন দখল করে। BJP ৭৭টি আসন জিতে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসে। বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস এই নির্বাচনে আবারও কোনো আসন পায়নি।
  • সিপিআই(এম) রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, যেখানে তৃণমূল কংগ্রেস আবারও সবচেয়ে বেশি সুবিধা পায়। ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে, AITC তার আধিপত্য বজায় রেখে ৪২টির মধ্যে ২৯টি আসন জয়লাভ করে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৭টি আসন বেশি। BJP ১২টি আসন পায়, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৬টি কম। INC ১টি আসন পায়, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১টি বেশি। বামফ্রন্ট, যার মধ্যে CPI(M) অন্তর্ভুক্ত, কোনো আসন জিততে পারেনি। এই তিনটি নির্বাচনে সিপিআই(এম)-নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট কোনো আসন পায়নি।

নতুন স্ট্র্যাটেজিঃ এবার ধর্মঘেঁষা সিপিআই(এম)

  • এক সময় সিপিআই(এম)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তারা নাস্তিক, ধর্মের প্রতি উদাসীন। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন রাজনৈতিক মেরুকরণের আবহ গোটা দেশে।
  • এপ্রিল মাসে মাদুরাইয়ে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ২৪তম পার্টি কংগ্রেস অধিবেশন। সেখানেই বিজেপির ‘হিন্দুত্ব রাজনীতি’ প্রতিরোধ করাই পার্টির অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। আরএসএস ও বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, মতাদর্শগত, সাংস্কৃতিক এবং সাংগঠনিক স্তরে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দল।
  • এই একই উপায় হয়ত নেওয়া হবে বাংলাতেও। কারণ বাংলাতে বাংলায় সিপিআই(এম) চাইছে সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দিতে। তাই সরাসরি ধর্মে জড়িত না হয়েও বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলা হচ্ছে।
  • দলের একাংশ মনে করছে, আরএসএস-বিজেপির ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে সিপিআই(এম)-এর মৌলিক পার্থক্য সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
  • সারা দেশে বিজেপি আর এসএসের বিরুদ্ধে এবং বাংলায় তৃনমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে এভাবেই প্রতিরক্ষা গড়ে তুলবে বঙ্গ মার্ক্সবাদী দল।
  • আর নাস্তিকে যেহেতু কাজ হচ্ছে না তাই আস্তিকের পথে গিয়েই এবার নতুন ভাবে ভেবে দেখতে চায় সিপিআইএম।

নতুন স্ট্র্যাটেজিঃ এবার ধর্মঘেঁষা সিপিআই(এম)

  • এক সময় সিপিআই(এম)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তারা নাস্তিক, ধর্মের প্রতি উদাসীন। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন রাজনৈতিক মেরুকরণের আবহ গোটা দেশে।
  • এপ্রিল মাসে মাদুরাইয়ে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ২৪তম পার্টি কংগ্রেস অধিবেশন। সেখানেই বিজেপির ‘হিন্দুত্ব রাজনীতি’ প্রতিরোধ করাই পার্টির অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। আরএসএস ও বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, মতাদর্শগত, সাংস্কৃতিক এবং সাংগঠনিক স্তরে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দল।
  • এই একই উপায় হয়ত নেওয়া হবে বাংলাতেও। কারণ বাংলাতে বাংলায় সিপিআই(এম) চাইছে সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দিতে। তাই সরাসরি ধর্মে জড়িত না হয়েও বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলা হচ্ছে।
  • দলের একাংশ মনে করছে, আরএসএস-বিজেপির ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে সিপিআই(এম)-এর মৌলিক পার্থক্য সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
  • সারা দেশে বিজেপি আর এসএসের বিরুদ্ধে এবং বাংলায় তৃনমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে এভাবেই প্রতিরক্ষা গড়ে তুলবে বঙ্গ মার্ক্সবাদী দল।
  • আর নাস্তিকে যেহেতু কাজ হচ্ছে না তাই আস্তিকের পথে গিয়েই এবার নতুন ভাবে ভেবে দেখতে চায় সিপিআইএম।

সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সম্মেলনের খসড়া রিপোর্টে তৃণমূলের সাথে একই মঞ্চে বাম

  • পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই তুঙ্গে। কিন্তু জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে একই মঞ্চে থাকার কারণে সিপিআই(এম)-এর অন্দরেই তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। এই বিভ্রান্তির কথা স্বীকার করে নিয়েছে সিপিআই(এম)। তবে রাজ্য সম্মেলনের খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বিজেপিকে রুখতে গেলে এই বিভ্রান্তি অন্তরায় হতে পারে না।
  • বাংলায় শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিআই(এম)-এর কঠোর অবস্থান থাকলেও জাতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে তারা একই মঞ্চে রয়েছে। এই বিষয়টিকে সামনে রেখেই বিজেপি আক্রমণ শানাচ্ছে। বিজেপির বক্তব্য, "দিল্লিতে দোস্তি, বাংলায় কুস্তি", অর্থাৎ জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়া রেখে রাজ্যে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা দ্বিচারিতা।
  • পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে বামের এই দোলাচল কিন্তু ২০২৬ নির্বাচনেও তাদের ভোটের ঝুলি কি হবে সেখানে প্রশ্ন রেখে দিচ্ছে। যাই হয়ে যাক,বাংলায় তৃনমূল ও বিজেপিকে এক হাত না নিয়ে কাজ কর্ম সঞ্চালন করা একদম ঠিক হবে না বলেই মনে করছে সিপিআই(এম) রিপোর্ট।
  • তৃণমূলের মেরুকরণের লাভের গুঁড় নিজেদের দিকে ঘোরালে তবেই লাভ বঙ্গ বাম গোষ্ঠীর।

.

ব্রডকাস্ট চ্যানেল

ডেইলি ডিজিটাল নিউজ পেপার