০৬ জানুয়ারি ২০২৫

ব্যাংককর্মীদের অপমান, কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা

  • ইংরেজ থেকে মহাজনদের যাওয়ার পর কেটে গেছে কত বছর, এগিয়েছে যুগ। তাও ঋণের বোঝা নিয়ে আজও আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন বাংলার কত হতদরিদ্র মানুষ।
  • এক কালে ইংরেজ নীলকর সাদা চামড়ার সাহেবরা শোষণ করেছে বাংলার তথা ভারতের কালো চামড়ার মানুষকে। আজ ইংরেজ গেছে ৭০ বছরের উপর, এসেছে গণতন্ত্র কিন্তু গরিব মানুষের দৃশ্যপট কিন্তু খুবএকটা বদলায়নি।
  • সাদা চামড়ার বদলে আজ এই দেশরই মানুষ লুটছে নিচুতলার মানুষকে। সেইরকমই ঘটনা এবার ঘটেছে বীরভূমের লাভপুরে।
  • বন্ধন ব্যাংক ও সম্পুর্না ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। ব্যাংককর্মীদের লাগাতার চাপ সহ্য করতে না পেরে দেনার দায়ে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিয়েছেন লক্ষণ মুখোপাধ্যায় (৫২) ও বনশ্রী মুখোপাধ্যায় (৪৮)।
  • সূত্র অনুযায়ী, একাধিক সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন ঐ দম্পতিযুগল। সময় হয়ে গেলেও দেনা শোধ করতে না পারায় প্রায়ই ব্যাংকর্মীরা বাড়ি গিয়ে লাগাতার চাপ দিতেন। সেই চাপ সহ্য করতে পারেনি লক্ষ্মণ ও বনশ্রী ।
  • ব্যাংকর্মীদের লাগাতার চাপের ফলে কোন উপায় না বের করতে পেরে, সস্ত্রিক লক্ষণ বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়, এরপর অনেকক্ষন কেটে যাওয়ায় বাড়ি না ফেরাতে সন্দেহ হয় বাড়ির লোকের।
  • দুজনকে খুঁজতে বেরোয় তারা, তখনই খুঁজতে খুঁজতে তাদের পাওয়া যায় কোপাই নদীর তীরে। দুজনের শরীরী তখন নিশ্চল, দেহে প্রান নেই।
  • উদ্ধার করে দুজনকেই ভর্তি করা হয় বীরভূম মহকুমা কলেজে, সেখানেই তাদের মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
  • সূত্র অনুযায়ী খবর, লক্ষণ বাবুর কোন স্থায়ি কাজ ছিল না, কখন রান্না কখনও বিশ্বভারতীর ক্যান্টিনে কাজ করতেন। ফলে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করার মতন সামরত তাদের ছিল না।
  • এই ঘটনা প্রকাশ পেতেই গ্রামজুরে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। তবে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হননি। চলছে জিজ্ঞাসাবাদ।

হচ্চে না দেনা শোধ, বাড়ছে আত্মহত্যা

  • এই একটা আত্মহত্যার ঘটনা, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে প্রদীপের নিচের অন্ধকারকে।
  • সারা ভারতবর্ষে প্রতিবছর বহু দরিদ্র মানুষ সুধুমাত্র দেনার দায়ে আত্মহত্যা করে। ভারতে দিনের পর দিন অবস্থা কখারাপ হচ্ছে কৃষকদের। অথচ এই ভারতের মেরুদণ্ড হল কৃষকরা।
  • ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে হুগলি জেলার আরামবাগে ৫৯ বছর বয়সী আলু চাষি গোলক বিজারী উল্লাল ঋণের বোঝা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন।
  • তিনি সমবায় ব্যাংক এবং মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ২০বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। অকাল বৃষ্টিপাত এবং সেচের জলের অভাবে ফসলের ক্ষতি হয়, ফলে তিনি ঋণ শোধ করতে অক্ষম হন। পরিমাণ আত্মহত্যা।
  • ২০১১ সালের মে মাসে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে ৪৫ বছর বয়সী কৃষক ব্রজেন্দ্র ঘোষ ঋণের বোঝা সইতে না পেরে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেন। তিনি ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে বোরো ধান চাষ করেছিলেন, কিন্তু ঝড়ের কারণে ফসল নষ্ট হয় এবং তিনি ঋণ শোধ করতে অক্ষম হন।
  • ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার বেলডাঙ্গা গ্রামে ৩৫ বছর বয়সী ভাগচাষি বামদেব মালিক মাইক্রোফাইন্যান্স ঋণের বোঝা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন। তিনি বন্ধন ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদের হারে ঋণ নিয়ে আমন ধান চাষ করেছিলেন, কিন্তু ফসলের নিম্ন উৎপাদন এবং মহাজনদের চাপের কারণে তিনি ঋণ শোধ করতে অক্ষম হন।
  • এইরকম আর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে বাংলা জুরে। মাইক্রফিন্যান্স যেমন বন্ধন সম্পুর্নার মতো ব্যাংকগুলির চাপে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছএন মানুষেরা। এর থেকে এটাই প্রমাণ হয় যুগ এগোলেও সাধারণ মানুষের বিশেষ করে গরীবমানুষের ভাগ্য কিন্তু এখনও ফেরেন

শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, এই বেদনাদায়ক ঘটনা অবিরত ঘটছে সারা ভারত জুড়ে

  • উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার জেলার সুসাদি খুর্দ গ্রামে এক কৃষক কীটনাশক সেবন করে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর পরিবার দাবি করেছে যে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারার কারণে ব্যাংকের কর্মকর্তারা তাঁকে হয়রানি করছিলেন। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে ব্যাংকের ম্যানেজার ও দুই ব্যাংক কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
  • উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে এক কৃষক ঋণ পরিশোধের বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কথিত ‘হয়রানির’ কারণে আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে যে, আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে তিনজন ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
  • হরিদ্বারে এক কৃষক ইউনিয়ন ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার শেরপুর খেলমাউ শাখা থেকে ₹৪.৫০ লাখ ঋণ নিয়েছিলেন।
  • 'তিনি নিয়মিত মাসিক কিস্তি পরিশোধ করছিলেন, কিন্তু মায়ের অসুস্থতার কারণে দুটি কিস্তি মিস করেন। তবে ব্যাংকের ম্যানেজার ও দুই কর্মকর্তা বারবার বাড়িতে এসে তাঁকে হয়রানি করছিলেন। ১৩ জানুয়ারি দুপুর প্রায় ২টায়, তিনজনই বাড়িতে এসে তাঁকে গালাগালি ও মারধর করতে শুরু করেন। পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীরা হস্তক্ষেপ করে তাঁকে উদ্ধার করেন। যখন ব্যাংক কর্মকর্তারা তাঁকে জোর করে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছিলেন, ওনার ভাইয়ের বউ নিশা তাঁদের হাতে নগদ ₹১০,০০০ দেন এবং বাকি টাকা দুই দিনের মধ্যে পরিশোধ করার আশ্বাস দেন।'
  • কর্ণাটকের বেলগাভি জেলায়, রাইবাগ তালুকের ৬৬ বছর বয়সী এক কৃষক তাঁর স্ত্রীর ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য বছরের পর বছর ধরে একাধিক অর্থ সংস্থা থেকে ₹১০ লাখ ঋণ নিয়েছিলেন।নিজের ছোট কৃষিজমি থেকে কম আয় হওয়ায় তিনি ক্রমবর্ধমান ঋণ পরিশোধ করতে অসমর্থ হন। তার পরিবার পুলিশকে জানিয়েছে যে, আগের দিন ঋণ আদায়কারীরা তাদের বাড়িতে গিয়ে তাকে মৌখিকভাবে অপমান করেছিল এবং ধার পরিশোধের জন্য বারবার ফোন করছিলI এক দিনের মধ্যে তাঁর বাসস্থানে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

ঋণ পুনরুদ্ধার এজেন্টদের হয়রানি প্রতিরোধ জন্য ঋণগ্রহীতারা কী সক্রিয় ব্যবস্থা নিতে পারেন?

    রেকর্ড সংরক্ষণ করুন:

  • পুনরুদ্ধার এজেন্টের সমস্ত কল, ইমেল এবং বার্তার রেকর্ড রাখুন, যাতে হয়রানির প্রমাণ থাকে।এই প্রমাণ আপনার ঋণ অফিসার বা ঋণদাতার কাছে উপস্থাপন করুন।
  • আরবিআই-তে অভিযোগ জানান:

  • যদি হয়রানি অব্যাহত থাকে, তাহলে সমস্ত বিশদসহ আরবিআই-কে লিখিতভাবে বা ইমেলের মাধ্যমে অভিযোগ জানান।
  • আরবিআই-এর নির্দেশিকা:

  • আরবিআই-এর "Loans and Advances" সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি পুনরুদ্ধার এজেন্টদের দ্বারা নির্দেশিকা লঙ্ঘন ও অপব্যবহার সম্পর্কে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে
  • যদি কোনো ব্যাঙ্ক এই নির্দেশ লঙ্ঘন করে, তাহলে আরবিআই নির্দিষ্ট অঞ্চলে ওই ব্যাঙ্কের পুনরুদ্ধার এজেন্টদের নিষিদ্ধ করতে পারে
  • বারবার লঙ্ঘন ঘটলে, আরবিআই নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা বাড়াতে পারে। তারা প্রকৃত অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে।

মানহানি ও অনধিকার প্রবেশ:

  • যদি পুনরুদ্ধার এজেন্ট আপনার বন্ধুবান্ধব, পরিবার বা কর্মস্থলে গিয়ে মানহানি করে, তাহলে আপনি ব্যাঙ্ক ও এজেন্টের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করতে পারেনI
  • যদি তারা আপনার অনুমতি ছাড়া আপনার সম্পত্তিতে প্রবেশ করে, তাহলে অনধিকার প্রবেশের জন্য মামলা করা যেতে পারে।

তাৎক্ষণিক সাহায্য:

  • প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিকটবর্তী থানায় অভিযোগ জানান।
  • যদি পুলিশ সাহায্য না করে বা অভিযোগ নথিভুক্ত না করে, তাহলে আদালতে গিয়ে ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিকার চেয়ে আবেদন করতে পারেন।

.

ব্রডকাস্ট চ্যানেল

ডেইলি ডিজিটাল নিউজ পেপার