Happening Now
Urban Disaster: Howrah Faces Land Subsidence
হাওড়ার বেলগাছিয়ায় ধস: আতঙ্কে বাসিন্দারা, জলের সংকট তীব্র
একদিকে ভূমিধসের ফলে বাড়িগুলিতে ফাটল, অন্যদিকে পানীয় জলের সংকট। হাওড়ার বেলগাছিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ এই দুই সমস্যায় দিশেহারা। জঞ্জালের স্তূপ থেকে নির্গত মিথেন গ্যাসের আতঙ্কও চরমে।


আবর্জনার পাহাড় থেকে বিপদের সূত্রপাত
- জঞ্জালের স্তূপ ভেঙ্গে মর্মান্তিক বিপর্যয় হাওড়ার বেলগাছিয়ায়। বেলগাছিয়ার কালীপদ মুখার্জি লেনে ভাগাড়ের চাপে ধ্বসে পড়েছে মাটি। ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ১৫ হাজার সাধারণ মানুষ।
- বেলগাছিয়ার ভাগাড়ে ১০-১৫ তলা উচ্চতার আবর্জনার স্তূপ জমে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে হাওড়া শহরের বিভিন্ন এলাকার বর্জ্য এখানে ফেলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাটির ধারণ ক্ষমতার (Soil Bearing Capacity) তুলনায় অনেক বেশি বর্জ্য জমানোর ফলে এই বিপর্যয় ঘটেছে।
- কিছুদিন থেকেই ভাগাড়ের আবর্জনার স্তূপে ফাটল দেখা দিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ধস নামে, রাস্তার ফাটল ১ ইঞ্চি থেকে বেড়ে ১০-১২ ইঞ্চি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এরপরেই বেশ কয়েকটি বাড়ি ভেঙে পড়ে, অনেকের ঘরের মেঝে ধসে যায়।
- বাসিন্দাদের মূখে এখন শুধুই চিন্তার ছায়া। কখন না জমি বাড়ি সব ছেড়ে জীবন হাতে নিয়ে পালাতে হয়। অনেক বাসিন্দাই বাড়ি ঘর ছেড়ে এখন যাযাবর।
- অন্যদিকে, হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধসের ফলে প্রধান পানীয় জলের পাইপলাইন ফেটে বিপর্যয় নেমে আসে। এর জেরে শিবপুর বিধানসভার কয়েকটি এলাকা ও উত্তর হাওড়ার কিছু অংশে পানীয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
- সদ্য নির্মিত কংক্রিটের রাস্তা এবং নিকাশি ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাওড়া পুরসভা ও কেএমডিএ দ্রুত বিকল্প পাইপলাইন বসানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে।
কেন হল এই ভূমিধ্বস?
- একদিনে বা হঠাৎ করে এই আবর্জনার স্তূপে ধস নামেনি। কিভাবে হল এই বিপর্যয়?
- যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভূত্বাত্বিক টিম পৌঁছায় ঘটনাস্থল। তারা গিয়ে দেখে নিয়ম না মেনেই জঞ্জালের উপর ফেলা হচ্ছে জঞ্জাল। মাটির পরীক্ষা হয়নি দীর্ঘদিন ধরে।মাটির ধারণ ক্ষমতার থেকে অনেক বেশি আবর্জনা ফেলা হয়েছে কয়েক বছর ধরে।
- মাটির নীচে জলের যে প্রধান পাইপটি ফেটেছে তা অনেক পুরানো। ফলে জলের চাপ আর নিতে পারেনি ফাটল ধরে পাইপে। একদিকে মাটির চাপ অন্যদিকে জলের চাপে ফেটে গেছে জলের পাইপ। ফলে হাওড়ার শিবপুর সহ অনেক স্থান এখন জলকষ্টে ভূগছে।
- ধসের পরেই স্থানে স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। ফাটল দিয়ে ক্রমাগত নির্গত হচ্ছে মিথেন গ্যাস। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেতরে গ্যাস ব্লাশট হওয়ার ফলেই ধস ও ফাটল নামে আবর্জনার স্তূপে। বিস্ফোরণে ভেঙ্গে পড়েছে বাড়ি , ঊপড়ে গেছে বিদ্যুতের খুঁটী। তড়িঘড়ি খালি করা হয়েছে এলাকা।
- বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ভূমিধসের কারণে প্রায় দেড় বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ধসের ফলে একটি বড় পাঁচিল ভেঙে পড়ে এবং এলাকায় ব্যাপক জল জমে যায়। মাটির নিচে ধসের কারণে জলের পাইপলাইন ফেটে বাড়িঘরের ভেতর জল ঢুকে পড়ে, ফলে বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে পড়েন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঘটনাস্থলে যান হাওড়ার জেলাশাসক এবং সিটি পুলিশের কমিশনার।
কতটা নজর প্রশাসনের?
- ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট-এর বিজ্ঞানীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ডঃ সাধন কুমার ঘোষ বলেন, "অতিরিক্ত বর্জ্য ফেলাই এই বিপর্যয়ের মূল কারণ। এই ডাম্পিং গ্রাউন্ড বন্ধ করতে হবে, না হলে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে।"
- হাওড়া পুরসভার কমিশনার বন্দনা পখরিওয়াল জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করার কাজ চলছে, পাশাপাশি পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার থেকে জল সরবরাহ শুরু করা হবে।
- জেলাশাসক পি দীপা প্রিয়া জানান, ভাগাড়ের মাটি পরীক্ষা করা হবে এবং 'বায়োমাইনিং'-এর মাধ্যমে আবর্জনা অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর ফলে কিছু বাড়ি খালি করতে হতে পারে।
- অন্যদিকে তীব্র জলকষ্ট মেটাতে হাওড়া পুরসভা বড়সড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে—এবার থেকে ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য পদ্মপুকুরের পানীয় জল সরবরাহ করা হবে।
- সাধারণত এইচএমসি (হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন) ও কেএমডিএ (কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি)-র মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন অংশে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। তবে বেলগাছিয়ার ভাগাড় এলাকায় দুটি আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপলাইনে বড় ফাটল ধরায় পানীয় জল সরবরাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।
- যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চললেও আগের অবস্থায় পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পুরসভা কর্তৃপক্ষ। তাই পদ্মপুকুরের পানীয় জলের পাইপলাইন সংযুক্ত করে বিপর্যস্ত এলাকায় জল সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
- হাওড়া পুরসভার প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী জানান, “পদ্মপুকুরের পানীয় জল ইতিমধ্যেই এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছতে শুরু করেছে। প্রায় ১৫০০ মিলিমিটার ব্যাসের লোহার পাইপ ফেটে যাওয়ায় বড়সড় ক্ষতি হয়েছে, তবে কেএমডিএ দ্রুতগতিতে কাজ করছে। পাশাপাশি ট্যাঙ্কারের মাধ্যমেও পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে।”
- অপরদিকে বাড়ি ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে বিতর্ক শুরু হয়েছে, বাসিন্দারা দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি তুলেছেন। তারা অভিযোগ করেছেন যে স্থানীয় প্রশাসন থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাননি।
- মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেছেন যে চার দিনের মধ্যে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরও জানান যে এলাকায় একটি ডাম্পিং গ্রাউন্ড স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে, যা স্থানীয়দের জন্য উপকারী হবে।




ব্রডকাস্ট চ্যানেল







ডেইলি ডিজিটাল নিউজ পেপার











Copyright © All Rights Reserved by Truee News Bangla is a copyright property of Independent Media Corp