০৬ জানুয়ারি ২০২৫

শাস্তির মুখে আইনজীবীরা, আজীবন নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত তাদের

কলকাতা হাইকোর্ট সম্প্রতি বসিরহাট আদালতের ছয়জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে সমন জারি করেছে। এই আইনজীবীরা আদালতের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আদালত অবমাননার অভিযোগে জারি সমন

  • কলকাতা হাইকোর্ট বসিরহাট আদালতের আরও ছয়জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে সমন জারি করেছে।
  • বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মোহাম্মদ শাব্বার রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। আদালত বসিরহাট আদালতের সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন যে অভিযুক্তদের খুব শীঘ্রই আদালতে হাজির করতে হবে।
  • এই ছয়জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিচারাধীন বন্দিদের আদালত কক্ষ থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছিলেন।
  • বিচারপতি বসাক মন্তব্য করেন, "তারা ক্ষমার অযোগ্য কাজ করেছেন। তাদের সাথে বার ভাগ করা উচিত নয়। তারা কখনোই বুঝবে না। তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে চলে গেছে।"
  • আদালত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে জানিয়েছে যে, তাদের শাস্তি পেতে হবে এবং বার কাউন্সিলকে নির্দেশ দেওয়া হবে যাতে তারা আজীবনের জন্য পেশা থেকে নিষিদ্ধ হন।
  • অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী আদালতের কাছে কিছুটা সহানুভূতি প্রদর্শনের আবেদন করেন, কিন্তু বিচারপতি বসাক সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, "অভিযুক্ত আইনজীবীদের শাস্তি পেতেই হবে।"
  • অভিযুক্ত আইনজীবীরা হলফনামা জমা দিয়ে দাবী করেন, যে তারা ভালো পরিবার থেকে এসেছেন। তবে বিচারপতি বসাক এই দাবিকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেন, "ওই আদালতে যেটুকু সামনে এসেছে, এটা তো হিমশৈলের চূড়ামাত্র।"

আসল ঘটনা কি ?

  • বসিরহাট আদালতের অতিরিক্ত জেলা বিচারকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার অপসারণের দাবিতে আইনজীবী ও ল ক্লার্করা সম্প্রতি বিক্ষোভ করেন।
  • এমনকি, তারা নাকি বিচারাধীন বন্দিদের আদালত কক্ষ থেকে বের করে দিয়েছিলেন, এই বিক্ষোভের সময় বিচারককে হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিক্ষোভের ফলে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
  • এই ঘটনার প্রেক্ষিতে, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রসিদির ডিভিশন বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বসিরহাট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে।
  • হাইকোর্ট অভিযুক্ত আইনজীবীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে পাঠায় এবং তাদের জবাবদিহি করতে নির্দেশ দেয় এবং চার সপ্তাহ পর মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারিত হয়।
  • শুনানির সময়, হাইকোর্টের এজলাসে বিক্ষোভের ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং প্রদর্শিত হয়। এই ভিডিও দেখার পর, আদালত বার অ্যাসোসিয়েশনের পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে রুল জারি করে এবং তাদের কাছ থেকে জবাব চেয়েছে।

আইনজীবীদের শাস্তিপ্রাপ্তির কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলা (বাংলায়):

  • নারায়ণ পাণ্ডে বনাম পন্নালাল পাণ্ডে (২০১৩): ক্লায়েন্টদের অনুমতি ছাড়াই জাল ভকিলনামা ও মিথ্যা আপসনামা আদালতে দাখিল করার জন্য আইনজীবীদের তিন বছরের জন্য বরখাস্ত করা হয়।
  • শম্ভুরাম যাদব বনাম হনুমানদাস খত্রি (২০০১): এক আইনজীবীকে পেশাগত দুরাচরণের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়, কারণ তিনি তাঁর মক্কেলকে বিচারককে ঘুষ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
  • আন্ধ্র প্রদেশ বার কাউন্সিল বনাম কুরাপাটি সত্যনারায়ণ (২০০৩): এক আইনজীবী ক্লায়েন্টের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন।
  • ইন রে: অ্যান অ্যাডভোকেট (১৯৬১): আদালত পেশাগত উচ্চ মান ও শালীনতা বজায় রাখার গুরুত্বের উপর জোর দেয়।
  • পি.ডি. খান্ডেকার বনাম মহারাষ্ট্র বার কাউন্সিল (১৯৮৪): একাধিক পেশাগত অনৈতিক কাজ, যেমন, অন্য আইনজীবীর ছদ্মবেশ ধারণ করার জন্য এক আইনজীবীকে চার মাসের জন্য বরখাস্ত করা হয়।
  • হিকমত আলি খান বনাম ঈশ্বর প্রসাদ আর্য (১৯৯৭): সুপ্রিম কোর্ট আইন পেশায় নৈতিকতা ও শৃঙ্খলার গুরুত্ব তুলে ধরে মত প্রকাশ করে।
  • হরিশ চন্দ্র তিওয়ারি বনাম বৈজু (২০০২): ক্লায়েন্টের অর্থ আত্মসাৎকে একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
  • প্রশান্ত ভূষণ: আদালতের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার মত টুইট করার জন্য তাঁকে এক টাকা জরিমানা করা হয়।

.

ব্রডকাস্ট চ্যানেল

ডেইলি ডিজিটাল নিউজ পেপার