অস্ট্রেলিয়ানদের টার্গেট করে কলকাতার ভুয়া কল সেন্টার, গ্রেফতার ২১

অস্ট্রেলিয়ার ব্রডব্যান্ড সংস্থার ভুয়ো কর্মী সেজে প্রতারণা

• দেশের মানুষদের থেকে টাকা হাতানো শেষ তাই এবার টার্গেট বিদেশিরা। সম্প্রতি কোলকাতার এক কল সেন্টার অভিযান চালিয়ে বড়সড় সাইবার প্রতারণা চক্রের পোল খূলেছে।
• ধৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা নিজেদের অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ব্রডব্যান্ড সংস্থার (National Broadband Network - NBN) কর্মী পরিচয় দিয়ে কল করতেন এবং বলতেন, গ্রাহকদের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে যদি তারা নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান না করেন আপগ্রেডের জন্য।
• ফলে এক এক দেশে টাকা হাতানোর এক এক উপায় বের করছে এই সাইবার জালিয়াতি চক্র।
• পুলিস সূত্র অনুযায়ী খবর, পুলিশ জানায়, ‘ওস্টেনিক্স সলিউশনস’ (Ostenix Solutions) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে এই বেআইনি কল সেন্টারটি চালাতেন সামির খান নামে এক ব্যক্তি। উত্তর কলকাতার লেক টাউনে অবস্থিত ছিল প্রতিষ্ঠানটি ।
• DIG (সাইবার ক্রাইম) অঞ্জলি সিং জানান, “বিশ্বস্ত সূত্র থেকে আমরা খবর পাই যে লেক টাউন থানা এলাকায় একটি অবৈধ কল সেন্টার চলছে। তারা অস্ট্রেলিয়ায় কল করে নিজেদের ব্রডব্যান্ড সংস্থার টেকনিক্যাল সাপোর্ট বলে পরিচয় দিত। এরপর প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কম্পিউটারে রিমোট অ্যাকসেস নিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিত।”

ছিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তি

• পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, কল সেন্টারে ‘Eye-Beam’ নামক এক সফটওয়্যার ব্যবহৃত হতো, যা প্রতিটি কম্পিউটারে ভার্চুয়াল মোবাইল ফোনের মতো কাজ করত।
• এই সফটওয়্যার ছিল বিদেশি আইপি (ফ্রান্স ও ফিনল্যান্ড) দ্বারা কনফিগার করা, যাতে বিদেশে কল করে প্রতারণা চালানো যায়। ফলে বোঝাই যাচ্ছে কতটা আটঘাট বেঁধে তারপর এই প্রতারণা চক্র শুরু হয়েছিলো।
• প্রথমে বিদেশী গ্রাহকদের ফোন নম্বর ‘লিড’ হিসেবে সিস্টেমে ঢোকানো হতো, বিশেষ করে যাঁরা অস্ট্রেলিয়ার NBN কানেকশন ব্যবহার করতেন।
• এরপর জানানো হতো, তাঁদের পরিষেবা আপগ্রেড না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এই ভয় দেখিয়ে ব্যাঙ্কের তথ্য ও ঠিকানা নেওয়া হতো।
• তল্লাশির সময় পুলিশ ২৯টি কম্পিউটার, ২৩টি মোবাইল ফোন, ২টি ল্যাপটপ, ৩টি পেনড্রাইভ, একটি হার্ডডিস্ক, ২টি রাউটার, একটি ২৪-পোর্ট সুইচ, অস্ট্রেলিয়ান গ্রাহকদের তথ্য এবং একটি উপস্থিতি রেজিস্টার বাজেয়াপ্ত করেছে।
• তল্লাশির সময় গ্রেপ্তার হন ২১ জন কর্মচারী, যারা অপরাধ মূলক পরিচালনা করত। ২১ জনের মধ্যে চারজনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং বাকি ১৭ জনকে পাঠানো হয়েছে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে।

২০২২ সাল থেকে চলছিল এই প্রতারণা

• DIG অঞ্জলি সিং আরও জানান, অভিযুক্তরা তাঁদের কাজ সম্পর্কে কোনও বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে, কল সেন্টারের সমস্ত কর্মচারী এই প্রতারণার কাজে জড়িত ছিলেন।
• এমনকি ২০২২ সাল থেকে এই সাইবার জালিয়াতির অপরাধ চালাচ্ছিল তারা। কয়েকশো বিদেশীর ব্যাংক অ্যাকাউণ্ট ফাঁকা করেছে এই দুষ্কৃতীরা। অবশেষে কয়েকবছর বাদে পুলিশের জালে ধরা পড়েছে এই সাইবার জালিয়াতির দল।

একই অভিযানে শহরের বিভিন্ন কোণে সাইবার জালিয়াতির দল গ্রেপ্তার

• পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা এবং বিধাননগর পুলিশ কলকাতা ও তার উপকণ্ঠে বেআইনি কল সেন্টারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযান চালিয়ে প্রতারণা চক্র ভেঙে দিয়েছে। এই অভিযানে সল্টলেকের সেক্টর V থেকে লেক টাউন এবং নারেন্দ্রপুর এলাকায় অবস্থিত বেআইনি কল সেন্টারগুলিতে হানা দেওয়া হয়। গ্রেপ্তার বেশ কিছুজন, উদ্ধার টাকা।
• প্রথম অভিযানে, বিধাননগর সাইবার সেল এবং ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্সের যৌথ দল সল্টলেকের ইমাজিন টেক পার্কে অবস্থিত একটি ভুয়ো কল সেন্টারে হানা দেয়। সেখানে থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে ৬৮ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়।
• নারেন্দ্রপুর এলাকায় পরিচালিত তৃতীয় অভিযানে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে এবং ২৮ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে। এই কল সেন্টারটি মূলত ব্রিটিশ নাগরিকদের লক্ষ্য করে ভুয়ো লটারি জেতার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করত।
• সর্বমোট, এই অভিযানে ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে চারজন মহিলা। পুলিশ প্রায় ৯৬ লক্ষ টাকা নগদ উদ্ধার করেছে এবং বিগত বছরে ২০৪ কোটিরও বেশি টাকার বিটকয়েন লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিস।
• এই অভিযানে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, উপস্থিতি রেজিস্টার এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণও জব্দ করা হয়েছে।
• পুলিশ জানিয়েছে যে এই বেআইনি কল সেন্টারগুলি বিদেশি নাগরিকদের টেক সাপোর্ট, লটারি জেতা বা ইন্টারনেট সংযোগ আপগ্রেডের নামে প্রতারণা করত।
• পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা এবং বিধাননগর পুলিশ এই ধরনের বেআইনি কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সাথে সাথে নাগরিকদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছে।