০৬ জানুয়ারি ২০২৫

Lorem ipsum dolor sit amet

কাটল অভিশাপ, ইতিহাসে প্রথমবার দলিত কাটোয়ার গীধেশ্বরী মন্দিরে প্রবেশ করলেন

প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো এই মন্দিরে বন্ধ ছিল দাস সম্প্রদায়ের প্রবেশ। সম্প্রতি সেই বৈষম্য কাটলো। প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের তৎপরতায় সমাজ পরিবর্তনের দিকে আরও এক ধাপ এগোলো বাংলা।

গীধেশ্বরী মন্দির সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু

  • এগিয়েছে সময়, এগিয়েছে যুগ কিন্তু আজও ভারতের বিভিন্ন যায়গায় এখনও অন্ধবিশ্বাসের ঘেরাটোপে আটকে মানুষ। সেই অভিশাপ থেকেই হয়ত কিছুটা মুক্তি পেলাম আমরা।
  • গীধেশ্বরী মন্দির প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো। কিন্তু এতদিন দাস সম্প্রদায়ে যারা প্রায় ২,০০০টি পরিবারের গ্রামের মোট জনসংখ্যার ছয় শতাংশ গঠন করে, জন্য মন্দিরে প্রবেশ ও পুজো দেওয়ার নিষেধ ছিল। যা নিয়ে কিছুদিন আগেই শোরগোল হয়। শিবরাত্রিতে ঠাকুরের মাথায় জল ঢালা নিয়ে তৈরি হয় বচসা। এমনকি মোতায়েন করতে হয় পুলিস বাহিনী।
  • সম্প্রতিক শিবরাত্রিতে এই প্রথার বিরুদ্ধে প্রশ্ন ওঠে। স্থানীয় দাস সম্প্রদায়ের মানুষরা নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবি তোলেন। তাঁদের প্রশ্ন ছিল—“ভগবান তো সবার, তাহলে আমাদের কেন পুজো দেওয়ার অধিকার থাকবে না?”
  • কিছুদিন আগেই এক সংবাদপত্রের লেখায় প্রকাশ পায় কাটোয়ার গীধেশ্বরী মন্দিরের জাতপাত বিভেদের কথা। গত ৩০০ বছর ধরে মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি ছিল না দাস সম্প্রদায়ের লোকেদের। এই নীতি প্রায় তৎকালীন জমিদারি আমল থেকে চলছিল।
  • অভিযোগ, নীচু জাতের তকমা দিয়ে তাঁদের পুজো করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে যখন গোটা বিশ্ব সামাজিক সাম্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বাংলার মতো প্রগতিশীল অঞ্চলে কেন এমন প্রথা টিকে থাকবে—এই প্রশ্ন তুলেছিল অনেকে।
  • এই ঘটনা নিয়ে শোরগোল শুরু হলে প্রশাসনের তরফে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এই নিয়ে কাটোয়ার মহকুমা শাসকের নেতৃত্বে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়।
  • সেখানে উপস্থিত ছিলেন কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, ব্লক প্রশাসনের আধিকারিক ও পুলিশ আধিকারিকরা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এখন থেকে দাস সম্প্রদায়ের সদস্যরাও গীধেশ্বরী মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন এবং অন্যদের মতোই পুজো দিতে পারবেন।
  • সূত্রের খবর, বৈঠকে দাস সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা ও মন্দির কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার মাধ্যমে তাঁরা একমত হন যে, এই মন্দিরে প্রবেশের অধিকার সবার থাকা উচিত।
  • এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলার একটি তথাকথিত অন্ধ ‘প্রথা’ ভেঙে গেল। কাটোয়া মুক্ত হল সামাজিক বিভেদের এক দীর্ঘকালীন বেড়াজাল থেকে।
  • গীধেশ্বর মন্দিরের এই ঘটনা শুধু একটি গ্রামের নয়, এটি গোটা বাংলার সামাজিক উন্নতির প্রতীক। প্রশাসনের উদ্যোগে ও স্থানীয়দের সচেতনতার ফলে এক দীর্ঘকালীন বৈষম্যের অবসান ঘটল।
  • এই পরিবর্তন শুধু একটি মন্দিরের নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন স্তরে সাম্য প্রতিষ্ঠার পথে এক নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

ঈশ্বর কবে বলেছিলেন দলিতদের পূজা গ্রহণ করবেন না?

  • কাল ভৈরব মন্দির, বারাণসী: উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে অবস্থিত এই প্রাচীন শিব মন্দিরে আজও দলিতদের দেবতাকে স্পর্শ করতে নিষেধ করা হয় দলিতদের মন্দিরের পুরোহিতদের মতে, তারা নাকি ধর্মীয় রীতির কারণে স্পর্শ করতে বাধা দেন।
  • লিঙ্গরাজ মন্দির, ভুবনেশ্বর: ওড়িশার এই বিখ্যাত ১১শ শতাব্দীর শিব মন্দিরে দলিতদের আজও শুধুমাত্র শিবরাত্রির দিন শুধু প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। ওই দিন তাদের প্রবেশের পর মন্দিরের অভ্যন্তরীণ অংশ শুদ্ধ করার জন্য নাকি বিশেষ রীতিনীতিও পালন করা হয়।
  • ভিও বৃদ্ধ জাগেশ্বর মন্দির, আলমোড়া: উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ায় অবস্থিত এই প্রাচীন শিব মন্দিরে দলিতদের মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি নেই। তাদের বাইরে থেকে পূজা করে থাকে।
  • কালীঅম্মান মন্দির, ভীরানমপট্টি, করুর জেলা: তামিলনাড়ুর করুর জেলার ভীরানমপট্টি গ্রামে অবস্থিত এই মন্দিরে দলিতদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। এই কারণে প্রশাসন মন্দিরটি সিল করে দেয়, যা নিয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদও করে ।
  • শ্রী কামাচি সমেতা বুদনাধীশ্বরর মন্দির, কুনিচমপেট: পুদুচেরির কুনিচমপেট গ্রামে অবস্থিত এই মন্দিরে এক দলিত নারীকে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়। তাকে তার সম্প্রদায়ের মন্দিরে পূজা করতে বলা হয়, যা সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের সৃষ্টি করে।

জাতিভেদের দেওয়াল ভেঙে দলিতদের উঠে আসা

  • পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত একটি সমীক্ষায় ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দলিতদের অর্থনৈতিক অবস্থার তুলনা করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশে, পূর্বাঞ্চলে সরকারী চাকরির জন্য দলিতদের আগ্রহ ৭.২ শতাংশ থেকে কমে ৬.৮ শতাংশে নেমে এসেছে, আর পশ্চিমাঞ্চলে তা সামান্য বেড়ে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৩ শতাংশে পৌঁছেছে। ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক উদারনীতির ফলে দলিতদের আর্থিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
  • একটি দলিত পরিবার থেকে উঠে আসা ভগবান গাওয়াই বর্তমানে সৌরভ এনার্জি DMCC-র সিইও এবং চেয়ারম্যান। এই সংস্থাটি দুবাই-ভিত্তিক, যার আর্থিক পরিমাণ ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি পেট্রোলিয়াম পণ্য ও পেট্রোকেমিক্যাল সরবরাহ করে এবং বিমান চলাচল খাতে পরামর্শ ও সহায়তা পরিষেবা প্রদান করে।
  • আরেক সফল দলিত ধারাবাহিক উদ্যোক্তা কলপনা সরোজ চলচ্চিত্র প্রযোজনা, রিয়েল এস্টেট সহ একাধিক ক্ষেত্রে কাজ করেছেন এবং বর্তমানে তিনি কামানি টিউবস-এর চেয়ারপার্সন। তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তির মূল্য আনুমানিক ১১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
  • দলিত বাবা-মায়ের সন্তান রাজা নায়কের মোট ব্যবসায়িক টার্নওভার প্রায় ৬০ কোটি টাকা, যা আন্তর্জাতিক শিপিং ও লজিস্টিকস, করুগেটেড প্যাকেজিং এবং প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার সহ বিভিন্ন খাতে বিস্তৃত।
  • জাতিগত বৈষম্যে নিরুৎসাহ না হয়ে, রতিভাই মাকওয়ানা আহমেদাবাদ-ভিত্তিক প্লাস্টিক ইন্টারমিডিয়ারিজ সংস্থা গুজরাত পিকার্স ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে বছরে প্রায় ৩৮০ কোটি টাকার রাজস্ব অর্জন করেন এবং প্রায় ৩,৫০০ জনকে কর্মসংস্থান প্রদান করেন।

  • .

    ব্রডকাস্ট চ্যানেল

    ডেইলি ডিজিটাল নিউজ পেপার