ভোট নয়, ভাবনায় কমিটি' - সিপিএমের ঘুঁটি সাজানো শুরু, বর্ধমান কেন্দ্রবিন্দুতে

পুরনো জমি ফেরত নিচ্ছে সিপিআইএম, ২০২৬-এর ব্যাটিং হবে সেই জমিতেই

• এই রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকা শরণার্থী কলোনিগুলি এক সময়ে বামপন্থীদের ক্ষমতা হ্রাস ছিল। এমন এক সময়ে, যখন বাংলায় ক্রমশ গেরুয়া কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন সিপিএম এখন এই শরণার্থী এলাকাগুলিতে তাদের পুরনো জমি পুনরুদ্ধার করতে এবং পাল্টা আক্রমণ শুরু করতে চাইছেI
• পুরুলিয়া , কালিম্পং, এবং পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়া রাজ্যের ২০টি জেলাজুড়ে শরণার্থী বসতি রয়েছে। এই জেলাগুলোর কুচবিহার, মালদা, বর্ধমান এবং কলকাতায় সিপিএম প্রতিনিধিরা চার বার বৈঠক করেছেন।
• সূত্রের খবর, আলোচনায় উঠে এসেছে শরণার্থী এলাকাগুলিতে আরএসএস-এর ক্রমবর্ধমান কার্যকলাপের বিষয়টি। সূত্র অনুযায়ী, সিপিএম একটি দ্বিমুখী কৌশল গ্রহণ করেছে। প্রথমত, ইউনাইটেড সেন্ট্রাল রিফিউজি কাউন্সিলের (ইউসিআরসি) ৭৫ বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে শরণার্থী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আবারও বিশেষভাবে তুলে ধরা। কারণ, নতুন প্রজন্ম এই ইতিহাস সম্পর্কে প্রায় অজ্ঞ।
• দ্বিতীয়ত, এর পাশাপাশি বর্তমান সমস্যাগুলি এবং শরণার্থী এলাকাগুলিতে মানুষের জীবিকা সংক্রান্ত ইস্যুগুলিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন গড়ে তুলে বামেদের প্রাসঙ্গিকতা পুনরুদ্ধার করা।
• সিপিআইএম-ও বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার দ্বারা প্রবর্তিত ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (CAA) নিয়ে একটি বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের কথা ভাবছে। যারা একসময় শরণার্থী ছিলেন, আজ তাদেরই নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য প্রাথমিক নথিপত্র সংগ্রহ করতে হচ্ছে, যা শরণার্থী সমাজের জন্য একপ্রকার অপ্রয়োজনীয় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও, বিজেপির প্রতিশ্রুতি ও বাস্তব কার্যকলাপের মধ্যে ফারাক জনগণের সামনে তুলে ধরতে বামপন্থীরা তৃণমূল স্তরে জোরালো প্রচার অভিযান চালানোর পরিকল্পনাও করছে।
• পার্টি নেতা প্রকাশ কারাট জোর দিয়ে বলেছেন, "সিপিআইএম গ্রামীণ গরিবদের মধ্যে কাজ করার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে যাতে তার ঐতিহ্যবাহী সমর্থনভিত্তি পুনরুদ্ধার করা যায়।" তিনি যোগ করেছেন, "আমরা এখন চেষ্টা করছি সেই সব শ্রেণির মধ্যে আমাদের প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে, যাদের সমর্থন আমরা হারিয়েছিলাম। এখন আমরা বুঝতে পেরেছি যে, গ্রামীণ গরিবদের মধ্যে আমাদেরকে অনেক কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সেটাই আমাদের মূল ভিত্তি ছিল। তাই আমরা সেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। কিছু অগ্রগতি ঘটেছে।"

বর্ধমানের ভূমিকন্যা, মিনাক্ষী মুখার্জি

• মিনাক্ষী মুখার্জী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একজন বামপন্থী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বাংলার বাম ছাত্র-যুব আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ। বর্তমানে মীনাক্ষী মুখার্জি সিপিআই(এম) দলের যুব সংগঠন ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক।
• মীনাক্ষী মুখার্জি বর্ধমানের কুলটিতে জন্মগ্রহণ করেন। জলধী কুমারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর তিনি আসানসোলের বিবি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপরে মীনাক্ষী মুখার্জি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
• যে মহিলা মমতা ব্যানার্জি এবং শুভেন্দু অধিকারীর মতো শক্তিশালী নেতাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, তিনি নিঃসন্দেহে ইস্পাতের মতো দৃঢ় মানসিকতার অধিকারী এবং যথেষ্ট যোগ্য, যাঁর উপর বর্ধমানের কামান যুদ্ধ নির্ভর করতে পারে।

নতুন স্ট্র্যাটেজিঃ এবার ধর্মঘেঁষা সিপিআই(এম)

• এক সময় সিপিআই(এম)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তারা নাস্তিক, ধর্মের প্রতি উদাসীন। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন রাজনৈতিক মেরুকরণের আবহ গোটা দেশে।
• এপ্রিল মাসে মাদুরাইয়ে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ২৪তম পার্টি কংগ্রেস অধিবেশন। সেখানেই বিজেপির ‘হিন্দুত্ব রাজনীতি’ প্রতিরোধ করাই পার্টির অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। আরএসএস ও বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, মতাদর্শগত, সাংস্কৃতিক এবং সাংগঠনিক স্তরে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দল।
• এই একই উপায় হয়ত নেওয়া হবে বাংলাতেও। কারণ বাংলাতে বাংলায় সিপিআই(এম) চাইছে সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দিতে। তাই সরাসরি ধর্মে জড়িত না হয়েও বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলা হচ্ছে।
• দলের একাংশ মনে করছে, আরএসএস-বিজেপির ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে সিপিআই(এম)-এর মৌলিক পার্থক্য সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।
• সারা দেশে বিজেপি আর এসএসের বিরুদ্ধে এবং বাংলায় তৃনমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে এভাবেই প্রতিরক্ষা গড়ে তুলবে বঙ্গ মার্ক্সবাদী দল।