০৬ জানুয়ারি ২০২৫

Manoranjan Byapari Demands Separate State Flag

বাংলা চাই নিজস্ব পতাকা! | বিধানসভায় বিতর্কে মনোরঞ্জন ব্যাপারী

পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব রাজ্য সঙ্গীত এবং রাজ্য দিবস চালুর পর এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে পৃথক পতাকার দাবি জানালেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। তাঁর এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।

রাজ্য সঙ্গীত ও দিবসের পর এবার পতাকার দাবি
  • একই দেশ একই ভৌগলিক পরিবেশ তার মাঝে থেকেও এবার বাংলার জন্য আলাদা পতাকার দাবী বোলাগরের মন্ত্রী মনোরঞ্জন ব্যাপারীর।
  • স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সাত দশক পশ্চিমবঙ্গে কোনও সরকারি রাজ্য সঙ্গীত বা দিবস ছিল না। সেটা বাকি অন্য রাজ্যে এখনও তৈরিও হয়নি, কিন্তু আমাদের দিদি সুপারফাস্ট।
  • মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি রাজ্য সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং পয়লা বৈশাখে ঘোষণা করা হয় পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে।
  • কিন্তু এবার দেশের মধ্যে থেকেও বাংলাকে আরও জোরদার করতে নতুন বায়না মনোরঞ্জন ব্যাপারীর, দাবী রাজ্যের জন্য চাই আলাদা পতাকা।
  • কিন্তু তার এই মন্তব্য প্রকাশ পেতেই শুরু বাংলা সহ দেশের রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড়।
  • এই প্রেক্ষিতেই বিধানসভায় বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী বলেন, “যে কোনও জাতির অস্তিত্ব টিকে থাকে তার ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য। বাংলা ভাষা আজ ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। আমাদের রাজ্যের যদি একটি নিজস্ব পতাকা থাকত, তবে গর্ববোধ করতাম।”
  • তাঁর দাবি, “বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদাও পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীকে রাজ্য সঙ্গীত উপহার দিয়েছেন। এবার সময় এসেছে, এমন একটি পতাকা ভাবার যা বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরবে।”
কি বলছে সংবিধান?
  • পতাকা চাইলেই কি পতাকা পাওয়া যায়? একই দেশের মধ্যে থেকে অদ্ভুত দাবী তৃনমূলের নেতার।
  • ভারতের কোনও রাজ্যের নিজস্ব পতাকা নেই আর তা হওয়ার প্রশ্ন থাকে না।
  • আগে কেবল জম্মু ও কাশ্মীরের স্বতন্ত্র পতাকা ছিল,কিন্তু তাও ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সঙ্গে বিলুপ্ত হয়।
  • যদিও কর্ণাটকে কন্নড় পরিচয়ের পতাকা দেখা যায়, তবে সেটি সরকারি রাজ্য পতাকা নয়। একই দেশের রাজ্যের ভীণ্ণ ভিন্ন পতাকা কেবল বিভেদকেই প্রকাশ করে ঐক্যবদ্ধতাকে নয়।
  • আমেরিকার মতো দেশের প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব পতাকা ও সংবিধান থাকলেও ভারতের গঠনতন্ত্র সেই পথ অনুসরণ করে না।
  • তাহলে কি স্বাধীনতার এতদিন বাদে নতুন করে লেখা হবে নতুন সংবিধান শুধুমাত্র একজন নেতা আলাদা করে রাজ্যের পতাকার দাবী করেছেন বলে? কে জানে!
তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি, কোটাক্ষ বিরোধীদের
  • এই দাবির সময় বিধানসভায় ছিলেন না কোনও বিজেপি বিধায়ক। ফলে ঐ মোক্ষম সময়ে কক্ষে বিতর্ক না হলেও বিধায়ক মনোরঞ্জনের বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
  • বিধায়ক মনোরঞ্জনের বক্তব্য ঘিরে বিজেপি কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। শিলিগুড়ির বিধায়ক ও বিজেপির মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ বলেন, এ ধরনের কোনও প্রস্তাব নাকি যায়নি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে।
  • তিনি মনোরঞ্জন ব্যাপারীর পৃথক রাজ্য পতাকার দাবি নিয়ে বলেন ‘মনোরঞ্জনবাবু হয়তো দলে কোণঠাসা। ওঁর বক্তব্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুশি হন বলেই এমন কথা বলছেন। পরবর্তী ধাপে হয়তো এরা আলাদা নোট ছাপার দাবিও তুলতে পারেন!”
  • মনোরঞ্জনের অতীত তুলে এনে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, “মনোরঞ্জন ব্যাপারী সম্ভবত তাঁর ইতিহাস ভুলে গিয়েছেন। উনি বাংলাদেশ থেকে তাড়া খেয়ে এদেশে এসেছেন। এখন এই দেশ থেকেই বিচ্ছিন্ন করার কথা ভাবছেন — এটা দুর্ভাগ্যজনক।”
  • চুপ নেই সিপিএমরাও, বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী এই দাবিকে সরাসরি কটাক্ষ করে বলেন, “রাজ্য সঙ্গীত হয়ে গেছে, এবার পতাকা। এরপর আলাদা সংবিধান? যেখানে আইনের শাসন নেই, শাসকের আইন চলে, সেখানে তো সবই আলাদা হয়ে যেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও মনোরঞ্জন ব্যাপারীর এ নিয়ে কথা বলা উচিত।”
  • রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি হয়তো শুধুই রাজনৈতিক বার্তা নয়, বরং মনোরঞ্জন ব্যাপারীর নিজেকে লাইমলাইটে ও প্রচারের মধ্যে নিয়ে আসার এক প্রচেষ্টা মাত্র।

.

ব্রডকাস্ট চ্যানেল

ডেইলি ডিজিটাল নিউজ পেপার